বৃহস্পতিবার
২১শে March ২০১৯
রাত ১২:০৫
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEixQHzjiSGVhtsIXMqCbhwizCVvYNWqA1DN9kJUiKxjR8INFr2IFOQ62Nw_boqtCG5391cEGJ3k4cKZiV3nWeHKVZfIM1tDGJtaEKl1UuDXRg0mhO0uLTkOT2iPWBVZksxQ4SrpcuutsvU/s640/9C017077-54BC-45E7-91FE-9C61E3328172.jpeg)
সেই মুহূতগুলোকে স্মতিময় আর মুধুময় করে তোলার ক্ষেত্রে কিছু মানুষেরও অবদান থাকে, যা অনিবার্য, তাদের কথা না বললেই নয়।
২৯শে জানুয়ারী ২০১৯। আমি বাংলাদেশ আসি । আমার ছোট মামা বিগত ২০ বছর পর বাংলাদেশে আসছেন। মামী, সাদিদ(আমার ছোট মামার একমাত্র ছেলে) আর ছোট মামা।
আমার বাংলাদেশ আসা ছিল কাকতলীয়। এরমধ্যেই আমার বড় মামা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন।
সব মিলাই মন দিল অন্যরকম ছিল। রাত ২:৩০মিনিট এসে পৌঁছালাম বাংলাদেশ।
দুই বাসার কোন বাসাই জানে না যে আমি আসবো। এয়ারপোর্ট থেকে উবার নিলাম। উবারে করেই বনশ্রী বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম, আব্বুকে একটা কল দিয়ে বললাম গেইটা খুলো।
পৌঁছানোর পর আব্বু বলে মামাদের (মামাদের বললাম কারন আমার মেজো মামাও আামাদের বাসায়) ডাকি, আমি বলি আহ্ ঘুমোক না, সকালেই কথা হবে।
সকাল হলো মামা শোনার পর প্রথম কথা বলল, " রাত কয়টায় রে মিতু," আমি হাসি, "আর বলি রাত তিনটায় মামা"।
মামার উত্তর, " করছ কী তুই, ওই মিতু তুই করস কি",- এই যে শুরু হল মামার সাথে আমার দেড় মাসের যাত্রা। আমি তখন ও জানি না যাত্রাটা এত সুন্দর আর মধুর হবে।
এখন আমি আমার ছোট মামার ছোট একটা পরিচয় দি, আমার মামা যেমন অমায়িক, তেমন সুমিষ্টভাষী, তেমন নামাজী, তেমন punctual ( কারন কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে সবার আগে, হা:হা:হা: ২ ঘন্টা আগে রেডি হয়ে আমাদের ডাইনিং রুমের চেয়ারে এসে বসে থাকে। আর আমরা সবাই পিংপং বলের মত দৌড়াদৌড়ি করছি, বিশেষ করে আমার ডিস্কো DaD).
মামা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরবে বাসার সবাইকে একসাথে করে, মামা আম্মু মিলে আমাকে বকা দেয়, মামা বলে "মিতু তোর সবই ভালো, শুধু নামাজটা পড়িস না"। ভিতরটা ফেটে যেত তখন, আগের মিতু হলে সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়াতাম, কিন্তু আল্লাহর সাথে যে আমার অনেক অভিমান, বসলে যে অভিমানের ফুলঝুরি নিয়ে বসবো। সে যে অনেক কথা বলার আছে, অনেক অভিমান, অনেক অভিযোগ, অনেক কান্না জমে আছে, যাইহোক যে কথা বলার জন্য এত কথা- মামা আমি এখন নামাজটা ধরার চেষ্টা করছি, পাঁচ ওয়াক্তই পড়া হয়না, কিন্তু আমি দুই ওয়াক্তও হলেও পড়ছি।
আমার ছোট মামাই যে শুধু এমন তা না, আমার সবগুলো মামাই এমন, ব্যবহার কথাবাতা সবকিছুতেই তাদের অনেক অনেক মিল। কিন্তু শুধু এই ছোট মামাই কেন। কারন মামার আদর ভালবাসা অন্যরকম, সবার থেকে আলাদা, হয়তো তার প্রকাশটা অন্য সবার থেকে আলাদা, হয়তো মামার, বাবার মত স্নেহ আমার মনকে ছুঁয়ে গেছে, যা এখনো কাঁদিয়ে বেরাচ্ছে এবং আজীবন মনে থাকবে।
শুধু যে আমার জন্য এই স্নেহ তা না, সবার জন্য তার কী মায়া, মহব্বত, হোক সে বিশাল কোটিপতি আর হোক সেই গরীব, সবাইকে বুকে টেনে বটবৃক্ষের মত আগলায় রাখতে চাচ্ছে, কী অমায়িক, মাটির মানুষ, যাই বলি মনে হচ্ছে কম বলা হচ্ছে বা আমি সঠিক ভাষা পাচ্ছি না মামাকে বিশ্লেষণ করার। আসলে মামাকে সামনে থেকে কেউ না দেখলে, না মিশলে বুঝবেনা।
মামা এমন একজন মানুষ যাকে দেখলাম সবাইকে একসাথে করার কি আপ্রাণ চেষ্টা। মানুষটা এখন সামনে নাই, আমি বসুন্ধরায় আর মামা কিনা সেই হাজার হাজার পাড়ি দিয়ে সেই সূদুর কানাডায়। হয়তোবা মামা নিজেও জানে না, মামার চাল-চলন, ভঙিমা মামার কোন এক ভাগ্নিকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়ে গেছে, হয়তো কখনো পড়বে (লিখায় কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে মামা আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত)। আজ অনেক গব করে সবার মাঝে বলতে ইচ্ছা করছে, "আমার মামা, আমার ছোট মামা"।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাকে আমার কথার যন্ত্রণায় ডাকত "বুড়ি"।
ছোটবেলা হায়রে ছোটবেলা, অনেক ভাইবোন সবাই মিলে কাটত যেইবেলা, আজ সব স্মতির পাতায়। অনেক যত্ন করে রাখতাম সেই সম্পর্কগুলো। ছোট ছোট ভাইবোনগুলো অনেক অনেক আদরের ছিলো। আসলে দোষ ওদের না দোষ আমারই, মেশিনও সচল রাখার জন্য চালু রাখতে হয়, তেল দিতে হয়, সাভিসিং করাতে হয়, আর এতো মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক। নতুন ঘরে এসেছি, নতুন সবকি, এই সবকিছুর সাথে তাল মিলাতে মিলাতে, নতুন একগুচ্ছ ভাইবোনকে আপন করে নিতে নিতে পিছে ফেলে এসেছি পুরানোদের। জায়গাটা বড় নড়বড়ে করে ফেলেছি। এই সময় এসে, হিসাব মিলাতে গিয়ে দেখি প্রবাদ বাক্যের প্রতিটা ছন্দ জীবন থেকে নেয়া।
তাই আজ হিসাব মিলাতে গিয়েও মিলালাম না, প্রবাদেই ছেড়ে দিলাম- "যা ছেড়ে এসেছি তা ছেড়ে এসেছি, যা চলে গেছে তো গেছে, পিছনে শুধু ধু ধু মরূঊদ্যান আর সামনে সে তো আমার বতমান।
জীবনটা আসলে স্কুল, আর আমরা হলাম ছাত্র। মামা অনেক কিছু শিখায় গেল, অনেক কিছু হাতে ধরে দেখায় দিয়ে গেলো। একজন দেশ পাগল মানুষ, আমি এমন মানুষ আমার চোখে খুব কম দেখছি।
একটা মানুষ এত অল্পতে কেমনে খুশি হয়, আনন্দ পাইতে পারে আমার মামাকে দেখে শিখা, মামাকে যে মনে করেই দিছে মামা এতেই খুশি, ভিতরে কি হাতি নাকি ঘোড়া নাকি সুচ, তা দেখার বিষয় না, মাশাল্লাহ।
নানুকে অনেক অনেক মিস করলো, আজ নানু থাকলে হয়তো সবকিছু অন্যরকম থাকত।
আমার মামাটা যেমন ইমোশনাল তেমন আবার রাগও আছে। দুইটাই আমার সাথে যায়, সেই মিল 😋😋। আমিও ইমোশোনালের ডিব্বা। অনেক অনেক কিছু লিখার আছে, অনেক কিছু বলার আছে, যেন বলে শেষ করা যাবে না, আমার ছোট মামার কথা।
ঠিক যেন বটবৃক্ষের এক শীতল ছায়া, আমাদের মনে হলো আমাদের অনেক প্রিয় একটা মানুষ আমাদের কাছ থেকে গেল, মানুষকে আপন করার কি সুনিপুণ যোগ্যতা। মনে প্রানে মামার জন্য দোয়া রইল, যেন আমার মামা সুস্হ এবং সবল থাকে।
আর মামা আপনিও আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আপনার দেখানো পথে চলতে পারি।
বিঃদ্রঃ : কোথাও কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে নিজ গুনে মাফ করবেন।